২০২৩ সালকে সম্ভাব্য ‘ক্রাইসিস ইয়ার’ (সংকটের বছর) ধরে নিয়ে ছয় নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যেগুলো হলো- খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বিদেশে দক্ষ জনবল পাঠানো, রেমিট্যান্স বাড়ানো, খাদ্য আমদানিতে উৎসকর স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে নির্ধারণ, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ানো এবং খাদ্য মজুত স্বস্তিদায়ক রাখা।
আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক রিপোর্টগুলো বিশ্লেষণ করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থবছরের কার্যাবলী সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক যে অবস্থা সামনে আসছে, যে প্রবলেম বা ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বে, সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রিসেন্টলি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণগুলো বলছে তিনটি কারণে ২০২৩ সাল খুব একটা ক্রাইসিস বছর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করেছে; করোনা মহামারির পর অর্থনৈতিক অবস্থা রিকভারি হওয়ার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে; চীন উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এই তিনটি বিষয় বিশ্ব বাজারকে প্রভাবিত করছে। এ তিনটিকে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক যে পর্যবেক্ষণ আসছে তাতে বলা হচ্ছে ২০২৩ সাল একটা ক্রাইসিস ইয়ার হওয়ার আশঙ্কা আছে। সবাইকে সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা যে অবজারভেশন দিচ্ছেন- সর্বাবস্থাতেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা যতই খাদ্য আমদানির কথা বলি, এখানে ক্রাইসিস থাকবে। যদিও ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে খাদ্যের ব্যাপারে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটা একটা ম্যাটার করবে। আর ফরেন কারেন্সির একটা ক্রাইসিস হচ্ছে, যে কারণে ফেডারেল রিজার্ভের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধির ফলে যেসব দেশ লোন নিয়ে কাজ করে বা আমদানি বেশি, তাদের দুই দিক দিয়েই অসুবিধা হচ্ছে। যেমন, আমরা যখন টাকা দিচ্ছি তখন বেশি দিচ্ছি এবং যখন নিচ্ছি তখন কম পাচ্ছি।সে কারণে ‘ডাবল নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট’ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেজন্য আমাদের সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। আমরা দেখছি কৃষি, মৎস্য, লাইভস্টকে বেশকিছু নতুন নতুন ভ্যারাইটি আসছে। এগুলো রিপ্লেস করলে উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাবে ইনশাল্লাহ।
তিনি আরো জানান, আমরা যদি বিদেশে অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ জনবল পাঠাই তাহলে তাদের জন্য উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ থাকবে। যেসব দেশে শ্রমিক পাঠানো হবে সেসব দেশে চাহিদা অনুযায়ী যেন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা হয়। তাদের সনদগুলো যেন সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পায়। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সার্কুলার জারি করেছে যে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটি হ্যান্ডেল করবে কীভাবে তাদের বেনিফিট দেওয়া যায়। যারা রেমিট্যান্স পাঠাবে তারা সহজ শর্তে কেবল নাম ও এনআইডি দিয়ে পাঠাতে পারে কি না সেটা দেখতে হবে।
এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, বিনিয়োগের যেসব শর্ত আছে সেগুলো আরও সহজ করা যায় কি না। আমরা কাজ করছি যে একদম বিডাতেই যাবেন বিনিয়োগকারীরা। সেখানে তিন-চারটা উইন্ডো থাকবে, যাতে বিনিয়োগকারীকে অন্য জায়গায় আর যেতে না হয়।খাদ্য মজুত প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের দেশ এখন যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। বেসরকারি সেক্টরকেও ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি পাশাপাশি যারা সাপ্লিমেন্টারি পণ্য আমদানি করে তাদেরকে সেসব দেশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া যায় কি না দেখা হচ্ছে। খাদ্য আমদানিতে ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উৎসে কর দিতে হয়। এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আলাপ-আলোচনা করে যেন দ্রুত সন্তোষজনক অবস্থায় চলে যায়। অনাবাদি সব জমি চাষের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।